সর্বশেষ

6/recent/ticker-posts

ভূতের বাড়ি

একটি ছোট্ট গ্রামে ছিল একটি পুরনো বাড়ি, যেটি গ্রামবাসীদের কাছে “ভূতের বাড়ি” নামে পরিচিত ছিল বাড়িটির চারপাশে বড় বড় গাছপালা, ঝোপঝাড়, আর অদ্ভুত নীরবতা থাকত। গ্রামবাসীরা জানত, রাতের বেলা এই বাড়ির সামনে দিয়ে কেউ গেলে নাকি অদ্ভুত শব্দ শোনা যায়—কখনো কারো কান্না, কখনো হাসি, আবার কখনো পায়ের আওয়াজ।

এই বাড়ি সম্পর্কে আরও জানার জন্য একজন সাংবাদিক, রাহুল, সেখানে যেতে মনস্থ করল। সে বিশ্বাস করত না ভূত-প্রেতের ব্যাপারে। তার ইচ্ছা ছিল সত্যিটা বের করে আনা। এক রাতে রাহুল একটি টর্চ, ক্যামেরা আর কিছু খাবার নিয়ে বাড়িটির দিকে রওনা দিল।

রাত তখন গভীর। বাড়িটির সামনে পৌঁছে রাহুল বুঝল, এখানকার পরিবেশ সাধারণ জায়গার থেকে অনেক আলাদা। বাতাসটা ভারী লাগছিল, আর চারপাশের পাতা গুলো এমন শব্দ করছিল যেন কেউ ফিসফিস করছে। সাহস নিয়ে রাহুল বাড়ির ভেতরে ঢুকল।

ভেতরে ঢুকে সে দেখতে পেল পুরনো কাঠের আসবাবপত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে। দেয়ালে বিশাল একটি ঘড়ি ছিল, যেটি থেমে গিয়েছিল ঠিক রাত বারোটায়। ঘরের ভেতর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে রাহুল লক্ষ্য করল, মেঝেতে একটি পুরনো ছবির ফ্রেম পড়ে আছে। ছবিটিতে ছিল একটি ছোট্ট মেয়ে, তার হাতে একটি পুতুল। মেয়েটির চোখে যেন এক অদ্ভুত বিষণ্ণতা ফুটে উঠছিল।

হঠাৎ করেই রাহুল শুনতে পেল কারো গুনগুন করার আওয়াজ। সে পেছন ফিরে তাকাল, কিন্তু কেউ ছিল না। সে ভাবল হয়তো বাতাসের শব্দ। কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই সে অনুভব করল, কেউ যেন তাকে দেখছে। রাহুলের শরীরে কাঁটা দিয়ে উঠল।

সে দ্রুত ক্যামেরা বের করে চারপাশে ছবি তুলতে লাগল। হঠাৎ একটি দরজা নিজে থেকেই খুলে গেল। দরজার ওপাশে ছিল অন্ধকার। সাহস করে রাহুল সেই দরজার দিকে এগোল। দরজার ওপাশে ছিল একটি ঘর, যেখানে একটি পুরনো পালঙ্ক আর একটি পুতুল রাখা ছিল। পুতুলটির মুখে অদ্ভুত হাসি, যা দেখে রাহুলের বুকের ভেতরটা কেমন যেন শূন্য হয়ে গেল।

হঠাৎ করেই ঘরের জানালা বন্ধ হয়ে গেল, আর বাতাসে একটি শীতল ঠাণ্ডা অনুভূতি আসতে লাগল। রাহুল দেখল, পুতুলটি নড়ছে! সে ভয়ে জমে গেল। তারপর একটি শিশুর কণ্ঠ শোনা গেল—“তুমি কেন এখানে এসেছ? আমার পুতুল ফিরিয়ে দাও!”

রাহুল আতঙ্কিত হয়ে চারপাশে তাকাল, কিন্তু কাউকে দেখতে পেল না। কণ্ঠটা যেন আসছিল ঘরের ভেতর থেকে। সে দেখল, পুতুলটির পাশেই একটি ছোট্ট বাক্স পড়ে আছে। বাক্সটি খুলতেই একটি ডায়েরি পাওয়া গেল। ডায়েরিটি পড়ে রাহুল জানতে পারল, এই বাড়িতে অনেক বছর আগে একটি ছোট্ট মেয়ে আর তার বাবা-মা থাকত। মেয়েটি খুব একা ছিল, আর পুতুলটি ছিল তার একমাত্র সঙ্গী। একদিন, এক ভয়ঙ্কর আগুনে মেয়েটি আর তার পুতুলটি মারা যায়। তার আত্মা নাকি এখনও এই বাড়িতে বন্দী, কারণ তার প্রিয় পুতুলটি কেউ নষ্ট করে দিয়েছিল।

রাহুল বুঝতে পারল, বাড়িটির ভৌতিক ইতিহাস সত্যি। সে দ্রুত বাড়ি থেকে বের হয়ে গ্রামের বড়দের সব ঘটনা জানাল। গ্রামবাসীরা একত্রিত হয়ে বাড়িটির চারপাশে পুজোর আয়োজন করল, যাতে মেয়েটির আত্মা মুক্তি পায়।

কিন্তু ঘটনার এখানেই শেষ নয়। কয়েক মাস পর গ্রামে একটি নতুন পরিবার এসে বাড়িটিতে থাকতে শুরু করে। প্রথম কিছুদিন সব ঠিকঠাক ছিল। তবে একদিন ছোট্ট মেয়ে রিয়া, বাড়ির উঠোনে খেলার সময় একটি অদ্ভুত পুতুল খুঁজে পায়। পুতুলটি পুরনো, তার মুখে সেই অদ্ভুত হাসি। রিয়া তার পুতুল নিয়ে খুব খুশি হয়েছিল, কিন্তু তার মা-বাবা বুঝতে পারেনি পুতুলটির ভয়ঙ্কর ইতিহাস।

রাতের বেলা রিয়া পুতুলটি নিয়ে খেলতে বসে। কিন্তু হঠাৎই বাড়িতে আবার শুরু হয় অদ্ভুত ঘটনা—জিনিসপত্র নিজে থেকে সরে যাওয়া, জানালা-দরজা বন্ধ হয়ে যাওয়া, আর সেই চিরচেনা গুনগুন শব্দ।

এক রাতে রিয়ার মা দেখতে পান, রিয়া ঘুমের মধ্যে উঠে বসে পুতুলটির সঙ্গে কথা বলছে। তার কণ্ঠ ছিল অদ্ভুত, যেন অন্য কেউ তার মাধ্যমে কথা বলছে। রিয়ার মা-বাবা আতঙ্কিত হয়ে স্থানীয় পুরোহিতকে ডাকেন। পুরোহিত জানান, পুতুলটি সেই পুরনো মেয়েটির প্রিয় সঙ্গী, যার আত্মা এখনও মুক্ত হয়নি। পুতুলটি নষ্ট না করলে এই ভৌতিক ঘটনার শেষ হবে না।

পুতুলটি নষ্ট করার জন্য গ্রামের সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নেয়। পুজোর আয়োজন করে পুতুলটিকে আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। পুতুলটি পুড়ে যাওয়ার সময় বিকট আওয়াজ হয়, যেন কেউ চিৎকার করছে। তারপর হঠাৎ করেই সব শান্ত হয়ে যায়।

এই ঘটনার পর বাড়িটি সত্যিই শান্ত হয়ে যায়। গ্রামবাসীরা বুঝতে পারে, কিছু স্মৃতি কখনও ভোলা যায় না। রাহুল তার অভিজ্ঞতা নিয়ে একটি বই লিখে ফেলে, যা পাঠকদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলে।

Post a Comment

0 Comments