সন্ধ্যা প্রায় ঘনিয়ে আসছে । পুকুর পাড়টা খুব নির্জন আর অন্ধকার নেমে এসেছে
সেখানে । পুকুরের অপর পাশের ঘন জঙ্গল থেকে ভেসে আসছে শিয়ালের হাকঁ । দিনের বেলাতে
জঙ্গলের গাছপালার জন্য সূর্যের আলো ঠিকমত পৌঁছায় না পুকুরে । তাই পুকুরের পানি
কুচঁকুচেঁ কালো । ঝিঁ ঝিঁ পোকারা ডাকছে । রহমত শিষ বাজাতে বাজাতে পুকুরের পাড়
দিয়ে হেঁটে বাড়িতে যাচ্ছিল । হঠাৎ দেখলো পুকুরপাড়ে তাল গাছটার গোড়ায় কে যেন
বসে আছে । লোকটার কাছে গিয়ে রহমত জিজ্ঞাসা করলো,”কে আপনি ?”
লোকটা মাথা তুলে রহমতের দিকে তাকিঁয়ে ভয়ংকরভাবে গর্জন করলো । লোকটার মুখে
কোন ঠোঁট ছিল না । বড় বড় দাঁত কপাটি আর অগ্নিলাল চোখদুটি দেখে ভয়ে সেখানেই
হার্টফেল করলো রহমত । আর বাড়ি ফিরলো না ও । সারারাত ধরে ওর বাবা গ্রামের লোকজন
নিয়ে ওকে খুজঁলো ।
কিন্তু কোথাও পেল না । এমনকি পুকুর পাড়েও না । অদ্ভুতভাবে রহমতের গায়েব
হওয়ার দুই দিন বাদে রাতে ঐ পুকুরে মাছ ধরতে গেল সাজু । টর্চের আলোয় ও দেখলো
পুকুরের কিনারায় বড় একটা বোয়াল মাছ । হঠাৎ চোখের পলকেই উধাও হয়ে গেল মাছটা ।
একটু অবাক হল সাজু । মাছটাকে খুজঁতে হাঁটু পানিতে নামলো ও । হঠাৎ ওর পায়ের তলা
থেকে মাটি সরে গেল । পানিতে ভেসে উঠলো ভয়ংকর এক মুখ । চিৎকার করলো সাজু । কিন্তু
মুখ থেকে কোন শব্দই বের হল না । বেশিক্ষণ লাগলো না ওর পানিতে তলিয়ে যেতে।
পরদিন সকালে লোকজন সাজুর টর্চলাইটটা পুকুর পাড়ে খুজেঁ পেল । তারপর থেকেই
গ্রামের লোকজনের মধ্যে আতংক ছড়িয়ে পড়লো । এতদিন লোকজন এই পুকুরটাকে অন্ধপুকুর
বলেই জানতো কারণ এর পানি কুচঁকুচেঁ কালো আর এই পুকুরের পানি কখনও সেঁচা যায় না
তাই । কিন্তু সাজু নিখোঁজ হওয়ার পর এই পুকুরটাকে সবাই ভূতের পুকুর নামে অভিহিত
করলো । তার কিছুদিনবাদেই শহর থেকে ফিরে আসলেন ফাহিম সাহেব । আসতে একটু রাত হয়ে
গেল । সেই পুকুরপাড় দিয়ে হেটেঁ বাড়ি যাচ্ছিলেন ।চাঁদটা ভালোই আলো ছড়াচ্ছিল ।
তালগাছটার কাছে এসে দেখলেন তার চার বছরের একমাত্র মেয়ে ঈশা গাছের গোড়ায় বসে খিল
খিল করে হাসছে ।
অবাক হয়ে ফাহিম সাহেব বললেন ,”মামণি
তুমি এত রাতে এখানে কি করছো ?”
ঈশা তখন পুকুর পাড় দিয়ে হাটঁতে হাটঁতে পুকুরে নেমে গেল । ফাহিম সাহেবও ঈশা
ঈশা বলে পুকুরে নেমে গেল । পুকুরে নেমে উনি বুঝতে পারলেন আসলে কত বড় ভুল করেছেন
তিনি । আগেই ভাবা উচিত ছিল তার মেয়ে এত রাতে পুকুরপাড় আসবে কেন ? আর পুকুরেই বা
নামবে কেন ? কিন্তু
এখন আর পুকুর থেকে উঠে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই তার । ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো ঈশা রূপী
মেয়েটা । একটুও পানিতে ভিজছে না ওর দেহটা । ফাহিম সাহেব তাকিঁয়ে দেখলেন ঈশার
ফুটফুটে চেহারাটা মুহূর্তের মধ্যেই ভয়ংকর আর নিষ্ঠুর পৈশাচিক চেহারায় রূপান্তরিত
হয়ে গেল ।
পরদিন সকালে ফাহিম সাহেবের লাশটা পুকুরপাড়েই পাওয়া গেল । রহমত আর সাজুর মত
গায়েব হন নি তিনি । চোখ দুটি উপরানো,দুই গালে
মাংস নেই,পুরো
শরীরে বড় বড় দাঁত আর নখের ছাপ,
হাত পা থেতলানো । বীভৎস লাশটা দেখে গ্রামবাসীরা হয়তো বুঝতে পেরেছে কতটা
ভয়ংকর আর নৃশংস অদৃশ্য ঘাতক শক্তিটা ।
কিন্তু কেন করছে এসব ?
কি চায় ওটা ? দুই.
ফাহিম সাহেবের লাশটাকে এনে বাড়ির উঠানে রাখা হল । কাকার লাশটা একনজর দেখেই
দৌড়ে সেখান থেকে চলে আসলো দিপু । মন খারাপ করে বসে রইলো কড়ই গাছের গোড়ায় ।
ফাহিম সাহেব দিপুর একমাত্র কাকা । ঢাকা থেকে আসার সময় কিছু না কিছু নিয়ে আসে ওর
জন্য । কাকার জন্য খুব কষ্ট লাগছে ওর । মনে মনে প্রতিশোধের জন্য দিশেহারা হয়ে
যায় দিপু । কিন্তু গ্রামের সবচেয়ে বোকা আর গাধা ছেলেটা হল দিপু । কখনও ওর দ্বারা
কিছু হয় না । ও সবার সাথে মিশতে চায় । কিন্তু কেউ ওর সাথে মিশে না । গ্রামের কোন
কাজে ওকে কেউ ডাকে না । ওর বাবা মাও ওর উপর বিরক্ত । তাই সবসময় মন মরা হয়ে বসে
থাকে ও । কিন্তু আজ ও দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ।
গ্রামবাসীর এই দুর্দিনে ও জীবন দিয়ে হলেও কিছু করবে । সন্ধ্যা নেমে এলো গ্রাম
জুড়ে। পাখিরা যার যার নীড়ে ফিরে যাচ্ছে । ঘরে ঘরে সন্ধ্যা প্রদীপ জ্বলে উঠলো ।
পুকুরের চারপাশে অন্ধকার । দিপু হাটঁতে হাটঁতে পুকুর পাড় আসলো । নীরবে এসে
দাড়াঁলো পুকুর পাড়ে । ঝিঁ ঝিঁ পোকার ডাক ছাড়া আর কিছুই শোনা যাচ্ছে না । চাদেঁর
অবয়বটা পুকুরের পানিতে হালকা ঢেউয়ে কাপঁছে । হঠাৎ দিপু দেখলো তালগাছের গোড়ায়
একটা গরু ঘাস খাচ্ছে । একটু অবাক হল ও ।এই সন্ধ্যা বেলায় কার গরু এখানে ঘাস
খাচ্ছে । সামনে এগিয়ে গেল দিপু । কাছাকাছি আসতেই দেখলো ওটা গরু নয় , ছোট কালো একটা
বিড়াল । চোখদুটো জ্বলজ্বল করছে ওটার । আরও অবাক হল দিপু ।
গরুটা বিড়াল হল কি করে ?
বিড়ালটা ওর দিকে তাকিঁয়ে পুকুরের লাফ দিল । পানির উপর কিছুদূর হেঁটে অদৃশ্য
হয়ে গেল বিড়ালটা । হালকা আলো জ্বলে উঠলো দিপুর হাতে ঝুলানো তাবিজটাতে । বুঝতে
পারলো তাবিজের গুণেই বেঁচে গেছে ও এ যাত্রায় । মনে পড়ে গেল তাবিজটা দেওয়া সময়
সাধু বাবা বলেছিলেন,”এই
তাবিজটা তোমাকে সব বিপদ থেকে বাচাঁবে ।”হাটঁতে হাটঁতে আবার বাড়ি চলে আসলো ও ।
শুয়ে শুয়ে ভাবলো কাল আবার সাধু বাবার কাছে যাবে ও । গভীর রাত । চুপি চুপি একটা
চোর আকবর আলীর বাড়িতে সিঁদ কেটে ঢুকলো । টের পেল আকবর আলী । “চোর,চোর” বলে চেচাঁতে
লাগলো উনি । ঘর থেকে বের হয়ে চোরটা সোজা পুকুরের দিকে দৌড় দিল।
আকবর আলীও চোরের পিছনে দৌড় দিল । কিন্তু পুকুর পাড় গেলেন না তিনি । চোরটা
দৌড়ে গিয়ে পুকুরে ঝাঁপ দিল । ভাবলো পুকুরটা সাতঁরে পাড় হয়ে জঙ্গল দিয়ে
পালিয়ে যাবে । কিন্তু বুঝতে পারেনি পুকুরে ঝাঁপ দেওয়া থেকে আকবর আলীর হাতে ধরা
পড়াই ভালো ছিল । বিশ মিনিট ধরে সাতরিঁয়ে ছোট পুকুরটা পাড় হতে পারছে না । যতই
সামনের দিকে যাচ্ছে পুকুরটা যেন ততই বড় হচ্ছে । তখনই ভেসে উঠলো ভয়ংকর সেই বীভৎস
মেয়ের চেহারাটা ।
পরদিন সকালে চোরের নিথর দেহটা পাওয়া গেল পুকুর পাড়ে । পুরো শরীরে নখ আর
দাতেঁর দাগ । লাশটা দেখেই বুঝা যায় কতটা কষ্ট দিয়ে দিয়ে মেরেছে লোকটাকে । খুব
মায়া লাগলো দিপুর । চোখের কোণে জল চলে আসলো ওর ।এ নিয়ে চার চারটা তরতাজা প্রাণ
নিল এই পুকুরটা । সেদিনই সাধুবাবার কুঠিরে গেল দিপু । সব কিছু খুলে বলল । সব শুনে
তিনি বললেন,”তুমি দুই
দিন পরে আসবে । আর এই দুই দিন কেউ যেন পুকুর পাড় না যায় ।” দিপু বাড়ি চলে আসলো
।
সেদিন বিকালে দিপুর সাথে দেখা হল ওর বন্ধু মিঠুর । ওকেই দেখেই মিঠু বলল,”কিরে বলদ,তোরে তো আজ কাল
দেখাই যায় না । কই থাকিস ?”
একটু কষ্ট পেলো দিপু । তবে কষ্টটা লুকিয়ে হেসে ও বলল,”দোস্ত, আমি তো বাড়িতে
থাকি । তুই এখন কই যাস ?”
মিঠু বলল,”একটু
মহুয়ার সাথে দেখা করতে যাবো ।” দিপু বলল,”যেখানেই
যাস যা, কিন্তু
পুকুর পাড় যাস না বন্ধু ।” মিঠু হেসে বলল,”আরে গাধা
পুকুর পাড় যাবো কেন ? তুই
জ্ঞান না দিয়ে ভাগ এখান থেকে ।” দিপু চলে গেল । সন্ধ্যার পর মিঠু মহুয়াদের
বাড়ির পিছনে আম গাছের নিচে অপেক্ষা করছিল । কিছুক্ষণবাদে মহুয়া আসলো । মিঠু
মহুয়ার দিকে তাকিঁয়ে তো অবাক । এত সুন্দর লাগছে মহুয়াকে । দেখে চোখ ফেরাতে
পারলো না । এক বছর ধরে মহুয়াকে দেখছে ও অথচ মনে হচ্ছে আজই প্রথম ও মহুয়াকে দেখছে
।
ইশারায় মহুয়া মিঠুকে ওর পিছন পিছন আসতে বলল ।ওর পিছন পিছন হাটঁতে লাগলো মিঠু
। মহুয়া মিঠুকে পুকুর পাড়ের দিকে নিয়ে যেতে লাগলো ।
পুকুর পাড়ে তালগাছটার গোড়ায় গিয়ে দাড়াঁলো মহুয়া । কেউ নেই আশেপাশে ।
মিঠুর হাতে হাত রাখলো মহুয়া । মিষ্টি সুরে বলল,”চল জঙ্গলে যাই । ওখানে কেউ যাবেও না আর দেখবেও না ।” মিঠু
ওর কথা শুনে মনে মনে আনন্দে নেচে উঠলো । হাটঁতে শুরু করলো মহুয়ার সাথে । জঙ্গলের
একটু ভিতরে ঢুকে একে অপরকে জড়িয়ে ধরলো ওরা । তখনই পুকুর থেকে উঠে আসলো মেয়েটি ।
বীভৎস চেহারা মেয়েটার । মিঠু আর মহুয়ার দিকে ধীরে ধীরে এগিয়ে আসতে লাগলো ।
কিন্তু সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হল ওরা ওদের জায়গা থেকে একচুলও নড়তে পারছে না আর
চিৎকারও করতে পারছে না । কাছাকাছি চলে আসলো ওটা । তখনই হঠাৎ মাঝখানে এসে দাড়ালো
দিপু । থেমে গেল ওটা । একনজর দিপুর দিকে তাকিয়ে অদৃশ্য হয়ে গেল ।
দিপু ধমক দিয়ে বলল,”কিরে
মিঠু,তোকে না
পুকুর পাড়ে আসতে নিষেধ করেছিলাম । তারপরও আসছিস কেন ?” মিঠু আমতা আমতা
করে বলল,”দোস্ত, কেমন জানি একটা
ঘোরের মধ্যে ছিলাম । খালি পুকুর পাড় আসতে ইচ্ছে করছিলো ।” মহুয়া বলল,”আমারও একই অবস্থা
হয়েছিলো দিপু ভাই ।” দিপু ব্যঙ্গ করে বলল,”হ্যা,বুঝেছি কিসের
ঘোরের মধ্যে ছিলেন আপনারা ?
এখন চল তাড়াতাড়ি এখান থেকে ।” যেতে যেতে মিঠু বলল,”দিপু,কত অপমান করেছি
তোকে ? কত বাজে
কথা বলেছি আমাকে মাফ করে দিস দয়া করে । আজকে তোর জন্যই বেচেঁ গেছি আমরা । তুই
আসলেই খুব সাহসী আর খুব ভালো ছেলে ।” দিপুর কাঁধ চাপড়ে দিল মিঠু । মনে মনে খুব
খুশি হল দিপু ।
দুইদিন বাদে সাধু বাবার কাছে আবার গেল দিপু । সাধুবাবা ওকে একটা তাবিজ দিয়ে
বলল,”তোমাদের
গ্রামের উপর দুষ্টু আত্মার নজর পড়েছে । তোমাকে আজ রাতে পুকুরের অপর পাশে জঙ্গলের
পরে যে কবরস্থানটা আছে সেখানে যেতে হবে । যেকোন একটা কবর থেকে এক টুকরা কাফনের
কাপড় এনে এই তাবিজটাকে মুড়িয়ে পুকুরে ফেলে দিতে হবে । তাহলে সমস্যার সমাধান
হয়ে যাবে । কিন্তু বিপদ আছে অনেক । তবে যত যাই কিছু হোক না কেন তুমি যাওয়ার পথে
একবারও পিছনে ফিরে তাকাবে না আর পুকুরে তাবিজটা ফেলার আগে কোন কথাও বলবে না ।পারবে
?” দিপু বলল,”যতই বিপদ আসুক না
কেন আমি আমার গ্রামের জন্য গ্রামবাসীর জন্য এই কাজটা করবোই ।”
গভীর রাত । চারিদিকে পিনপতন নীরবতা । তাবিজটা নিয়ে পুকুর পাড়ে চলে আসলো দিপু
। জঙ্গলের দিকে হাটঁতে লাগলো ও । ঝড় তুফান কিছু নেই । অথচ দিপুর কাছে মনে হল
পিছনের সবকিছু প্রচন্ড বাতাসে ভেঙ্গেচুরে যাচ্ছে । শোঁ শোঁ করে বাতাস বইছে । উতলে
উঠছে পুকুরের পানি । দিপু কোন দিকে না তাকিঁয়ে সোজা হাটঁছে । জঙ্গলের কাছে চলে
আসলো ও । তখনই পিছন থেকে কে যেন ফিস ফিস করে বলল,”দিপু,পিছনের
দিকে তাকাও । যেও না তুমি । যা চাও তুমি তাই দিব । এ গ্রামের জমিদার বানিয়ে দিবো
তোমাকে ।” দিপু সে কথায় কোন কান দিয়ে সোজা হাটঁতে লাগলো । জঙ্গলের ভিতরে ঢুকে
গেল ও ।
জঙ্গলটা পাড় হলেই কবরস্থান । জঙ্গলের ভিতর দিয়ে হাটঁছে ও । হঠাৎ দেখলো
সামনের একটা গাছে মিঠু ঝুলছে । চোখগুলো খোলা । জিহ্বা বের করা । থামলো না দিপু ।
সামনে এগিয়ে গেল ও । কিছুদূর সামনে আর একটা গাছে ঝুলছে মহুয়ার লাশ । তারপরের
গাছে ঝুলছে দিপুর মায়ের লাশ । তারপরও থামলো না দিপু । এগিয়ে গেল সামনের দিকে ।
বার বার পিছনে তাকাতে ওর খুব ইচ্ছে করতেছে । তবে ও জানে এ সবই ওই বীভৎস চেহারার
ভেলকি । ভয়ে ওর বুক কাপঁছে । সমস্ত সাহস সঞ্চয় করে ও সামনের দিকে এগিয়ে গেল ।
জঙ্গলটা পার হয়ে গেল । কবরস্থানে ঢুকলো ।
একটু নতুন কবর খুজঁছিল ও । পেয়ে গেল । কবরটা খুঁড়ে লাশটার মাথার দিক থেকে
একটু কাফনের কাপড় কেটে নিল । আগের মত মাটি দিয়ে কবরটাকে ভরে দিল । হাফিঁয়ে গেল
দিপু । একটু জিরিয়ে নিল । ওর কাছে মনে হল কবরস্থানের সব লাশ ওর দিকে তাকিঁয়ে আছে
। আবার হাটঁতে লাগলো দিপু । হাটঁতে হাটঁতে তাবিজটাকে কাফনের কাপড় দিয়ে মুড়িয়ে
ভালোমত বেধেঁ নিল । কবরস্থানটা পার হয়ে জঙ্গলে ঢুকে গেল ও । অর্ধেকটা জঙ্গলে চলে
এসেছে । তখন দেখলো জঙ্গলের বড় বড় সমস্ত গাছে ঝুলছে ওর মৃতদেহ । চোখ খোলা আর
জিহ্বাটা বের করা । থমকে দাড়াঁলো দিপু । পিছনে মনে হচ্ছে হাজার হাজার লাশ গাছপালা
সব ভেঙ্গে ওর দিকে এগিয়ে আসছে ।
মনে হয় ওর পায়ে কে যেন পাথর বেধেঁ দিয়েছে । হাটঁতে খুব কষ্ট হচ্ছে ওর ।
একটু একটু করে সামনের দিকে এগোতে লাগলো ও । পিছন থেকে বাতাসে ভেসে আসতে লাগলো
হাজারো ডাক,”দিপু,দিপু,দিপু ।”কোনদিকে
না তাকিঁয়ে ও সোজা হাটঁতে লাগলো । অনেক কষ্টে পুকুরের পাড়ে পৌছালো ও । তাবিজটাকে
ছুড়ে মারলো পুকুরে । শেষ বারের মত পানিতে ভেসে উঠলো সেই মেয়েটার বীভৎস চেহারাটা
। হালকা ঢেউয়ে ধীরে ধীরে পানিতে মিলিয়ে গেল চেহারাটা । দীর্ঘশ্বাস ফেলে পুকুর
পাড়ে বসে পড়লো দিপু।
বুক এখনও কাঁপছে ওর । পুরো শরীর ঘামে ভিজে গেছে । আকাশের দিকে তাকালো ও ।
চাঁদের উপর থেকে সরে গেছে ভয়াল ছায়াটা । তখনই শূণ্যে ভেসে উঠলো রহমত, সাজু আর ফাহিম
সাহেবের হাসিমাখা মুখ । ওদেরকে দেখে খুব খুশি হল দিপু । ধীরে ধীরে মিলিয়ে গেল
চেহারাগুলো । উঠে দাড়ালো দিপু । বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিল ও । কিছুদূর যেতেই
দেখলো পথের মাঝে দাড়িঁয়ে আছে ওর মা,বাবা আর
মিঠুসহ সকল গ্রামবাসী । মিঠু এসে জড়িয়ে ধরলো দিপুকে । বলল,”দোস্ত,আমি আজকে তোর
পিছনে পিছনে গিয়েছিলাম সাধু বাবার কাছে ।সবিকছু শুনেছি । গ্রামের সবাইকে বলে
দিয়েছি তোর কথা । এখন বাকিটা তুই বল ।” দিপু তখন সবকিছু খুলে বলল ।
সবকিছু শুনে গ্রামবাসীরা খুব খুশি হল । প্রশংসা করলো সবাই । দিপুকে গ্রামের
সবচেয়ে ভালো আর সাহসী ছেলে হিসেবে অভিহিত করলো ।
x
0 Comments